সবাইকে Help করাই আমাদের লক্ষ।

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পাওয়ার ব্যাংক কেনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

আজকাল মোবাইল ফোন গুলোর ডিজাইন অনেক স্লিম হয়ে গেছে, কার্যক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে কিন্তু ব্যাটারি লাইফ তেমন ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। আবার আগের তুলনায় মোবাইল ফোন ব্যাবহারের ধরণ ও অনেক পাল্টে গেছে। তো এই অবস্থায় আমাদের প্রয়োজন পরে একটি পাওয়ার ব্যাংক, যাতে আমরা যখন চাই, যেখানে চাই, আমাদের ফোনকে চার্জ করতে পারি এবং আবার ব্যাবহারের জন্য উপযোগী করে তুলতে পারি। তো এই পোর্টেবল সুবিধার কারণে এটি দিনদিন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন দামের এবং বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট একসাথে পাওয়া যাচ্ছে। তো চলুন কিছু নির্দেশনা জেনে নেওয়া যাক। যাতে সঠিক ভাবে নির্বাচন এবং লাভবান হওয়া যায়। 

টিপস ১: ক্যাপাসিটির দিকে খেয়াল রাখুন 

সর্বপ্রথমে যে পয়েন্ট আসে তা হলো ক্যাপাসিটি। দেখুন বর্তমান বাজারে ১,৫০০ এমএএইচ থেকে শুরু করে ২০-৩০ হাজার এমএএইচ পর্যন্ত ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক কিনতে পাওয়া যায়। এই অবস্থায় আপনাকে নির্ণয় করতে হবে যে আপনি বেশি রিচার্জ সাইকেল চাচ্ছেন নাকি বেশি পোর্টাবিলিটি চাচ্ছেন এবং এর উপর নির্ভর করে আপনাকে একটি ক্যাপাসিটি পছন্দ করতে হবে। একটি কথা আপনাকে পরিষ্কার করে দেই, অবশ্য অনেকে এটির ব্যাপারে ভুল ভেবে থাকেন। মনে করুন আপনার ফোনের ব্যাটারি ২,৫০০ এমএএইচ এবং আপনার পাওয়ার ব্যাঙ্কের ক্যাপাসিটি ১০,০০০ এমএএইচ। এর মানে কিন্তু এটা নয় যে আপনি আপনার ফোনকে ৪ বার রিচার্জ করতে পারবেন। দেখুন আপনার প্রোডাক্ট টির গায়ে যদি ১০,০০০ এমএএইচ লেখা থাকে তবে এর ক্যাপাসিটি ১০ হাজার এমএএইচ ই হবে, কোম্পানি আপনাকে মিথ্যা কথা বলে না। কিন্তু যখন আপনার ফোনটিকে চার্জ করেন তখন কিছু এনার্জি লস হয়ে যায়। এবং মোট ক্যাপাসিটির বাস্তবিকভাবে ৭৫-৯৫% কর্মদক্ষতা পাওয়া যায়। যদিও কর্মদক্ষতার শতকরা হার নির্ভর করে বিভিন্ন কোম্পানির উপর। অর্থাৎ ১০ হাজার এমএএইচ ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক ২,৫০০ এমএএইচ ক্যাপাসিটির মোবাইল ব্যাটারিকে প্রায় ৩ বারের মতো রিচার্জ করতে সক্ষম হবে। এখন মনে করুন আপনার প্রোডাক্টের কর্মদক্ষতা ৭০% তবে আপনি পাবেন ৭ হাজার এমএএইচ সমান দক্ষতা, যদি কর্মদক্ষতা ৮০% হয় তবে পাবেন ৮ হাজার আর যদি হয় ৯০% তবে ৯ হাজার এমএএইচ সমান দক্ষতা পেতে পারেন। তো বর্ণিত ক্যাপাসিটি বাস্তবিকভাবে কখনোয় আসল হয়না, হালকা কম হতে পারে। 

টিপস ২: সর্বউত্তম পারফর্মেন্স পেতে ৮-১০ রিচার্জ সাইকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন 

একটি কথা জেনে রাখুন যে, একটি পাওয়ার ব্যাংক প্রথম ৮-১০ রিচার্জ সাইকেল সম্পূর্ণ করার পরেই তার সর্বাধিক কার্যক্ষমতা প্রদর্শনের অবস্থায় প্রবেশ করে। আপনি একটি প্রোডাক্ট কিনলেন এবং মাত্র এক কিংবা দুইবার চার্জ করেই বুঝে যাওয়া সম্ভব হবে না যে প্রোডাক্ট টি ভালো না মন্দ। আপনাকে ৫-৬ বার এটাকে ব্যবহার করতে হবে এবং তারপরেই আপনি বলতে পারবেন যে আপনার প্রোডাক্ট টি ভালো না মন্দ। এবং তখনকার প্রাপ্ত আউটপুট একটি নির্দিষ্ট আউটপুট হবে। 

টিপস ৩: পাস থ্রু চার্জিং ফিচার আছে কিনা দেখে নিন 

পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় আরেকটি ফিচার যাচায় করা উচিৎ, সেটি হলো পাস থ্রু চার্জিং (Pass Through Charging) ফিচার। এখন বলি পাস থ্রু চার্জিং কি তা নিয়ে। দেখুন আপনি যখন নতুন একটি পাওয়ার ব্যাংক কেনেন তখন তার সাথে শুধু একটি ইউএসবি ক্যাবল থাকে। আপনাকে নতুন পাওয়ার অ্যাডাপটার দেওয়া হয়না চার্জ করার জন্য, কেনোনা আপনার ফোনের সাথে তো পাওয়ার অ্যাডাপটার আগে থেকেই থাকে। আর আপনি যদি কোথাও ঘুরতেও যান এগুলোর সাথে তো আপনি তো আর দুইটি আলাদা আলাদা পাওয়ার অ্যাডাপটার নিয়ে যাবেন না তাই না? মনে করুন আপনি পাওয়ার অ্যাডাপটারের সাথে পাওয়ার ব্যাঙ্ককে সংযোগ করলেন এবং পাওয়ার ব্যাঙ্ককের সাথে আপনার স্মার্টফোনকে। এখন আপনার পাওয়ার ব্যাঙ্ককে যদি পাস থ্রু চার্জিং ফিচার থাকে তাহলে কি হবে দেখুন। তাহলে প্রথমে আপনার ফোনটি চার্জ হবে বিদ্যুৎ থেকে তারপর আপনার পাওয়ার ব্যাঙ্কটি চার্জ হবে। এই ফিচারটি সকল পাওয়ার ব্যাঙ্কে থাকেনা। যেমন যখন সাওমিতে এই ফিচার আছে কিন্তু ওয়ান প্লাসে এই ফিচার নেই। আপনি যদি রাতে একসাথে সবগুলো চার্জে লাগিয়ে ঘুমিয়ে যান তবে এই ফিচারটির সাহায্যে সকালে দেখবেন আপনার ফোনটিও ফুল চার্জ হয়ে গেছে এবং আপনার পাওয়ার ব্যাঙ্কের চার্জও ফুল হয়ে গেছে। এটি অনেক প্রয়োজনীয় একটি ফিচার এবং আপনি একই অ্যাডাপটার এর সাহায্যে একসাথে দুইটি ডিভাইজই চার্জ করতে পারবেন।

টিপস ৪: প্রোটেকশন এর কথা মাথায় রাখুন 

এবার কথা বলা যাক প্রোটেকশন নিয়ে। দেখুন আপনি একটি হাই-ক্যাপাসিটি ব্যাটারি বহন করছেন, সেটা আপনার পকেটে হোক আর আপনার ব্যাগে হোক। তো এই অবস্থায় প্রোটেকশন অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পরে। পাওয়ার ব্যাঙ্কের প্রস্তুতকারী বড় কোম্পানি সমূহ আপনাকে মুলত ৪ টি প্রোটেকশন দিয়ে থাকে। 

∆ওভার চার্জিং প্রোটেকশন 

∆ওভার ভোল্টেজ প্রোটেকশন 

∆সর্ট সার্কিট প্রোটেকশন 

∆অধিক মাত্রায় গরম হওয়া থেকে প্রোটেকশন 

এই চারটি প্রোটেকশন যদি আপনার পাওয়ার ব্যাংকটিতে থাকে তবে আপনি নিশ্চিন্তে তা যেখানে খুশি যেভাবে খুশি ব্যবহার ও পরিবহন করতে পারেন। এই চারটি প্রোটেকশন থাকার ফলে না তো আপনার ফোনের কোন ক্ষতি হবে আর নাই বা আপনার পাওয়ার ব্যাঙ্কটির কোন সমস্যা হবে। তাই কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করে দেখুন এই গুরুত্বপূর্ণ প্রোটেকশন গুলো আছে কি না। 

টিপস ৫ : আউটপুট পোর্টস গুলো দেখে নিন 

কিছু পাওয়ার ব্যাঙ্কে ১ টি সিঙ্গেল আউটপুট পোর্ট দেখতে পাওয়া যায় আবার কিছু পাওয়ার ব্যাঙ্কে ৩-৪ টি আউটপুট পোর্টস দেখতে পাওয়া যায়। এখন আপনি কোনটি পছন্দ করবেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার ব্যাবহারের উপর। আপনি যদি একটি ডিভাইজ চার্জ করতে চান তবে সিঙ্গেল আউটপুট পোর্ট কিনতে পারেন যদি একাধিক ডিভাইজ চার্জ করতে চান তবে ৩-৪ পোর্ট ওয়ালা কিনতে পারেন। কিছু কিছু পাওয়ার ব্যাঙ্কে আবার দুইটি পোর্ট থাকলে একটি কম পাওয়ারের হয় আরেকটি বেশি পাওয়ারের হয়। আবার দুইটিই হাই-পাওয়ারের হতে পারে। প্রত্যেক পোর্ট এর ভোল্টেজ তো ৫ অথবা ৫.১ হয়, কিন্তু কারেন্ট কোন পোর্ট এ ১ অ্যাম্পিয়ার হয় আবার কোন পোর্টে ২.১ অ্যাম্পিয়ার হয়। তো এটি আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে যে আপনার প্রয়োজন কতটুকু। সেই অনুসারের আউটপুট পোর্টস ওয়ালা পাওয়ার ব্যাংক আপনি কিনতে পারেন। 

টিপস ৬: দেখে নিন কুইক চার্জিং প্রযুক্তি আছে কি না 

এবার কথা বলি পাওয়ার ব্যাঙ্কে কুইক চার্জিং নিয়ে। মোবাইল ফোনে কুইক চার্জং সম্বব। একটি পাওয়ার অ্যাডাপটার থেকে যেমন মোবাইল ফোন কুইক চার্জ করা যায় তেমনি পাওয়ার ব্যাংক থেকেও কুইক চার্জিং সম্ভব। যে পাওয়ার ব্যাঙ্কে কুইক চার্জিং প্রযুক্তি থাকে সেই পাওয়ার ব্যাংক নিজে তো অনেক দ্রুত চার্জ হয়েই যায় আবার সাথাসাথি আপনার ফোনকেও অনেক দ্রুত চার্জ করতে পারে। এমন অবস্থায় একটি কোম্পানি আছে যার নাম অকি, এদের প্রোডাক্ট কুইক চার্জিং সমর্থন করে। এবং অনেক ভালো মানের প্রোডাক্ট এরা বাজারজাত করে থাকে। আপনার ডিভাইজ দুইটিই যদি কুইক চার্জিং প্রযুক্তি ওয়ালা হয় তবে আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্যাবল লাগিয়ে বসে থাকতে হবে না। মাত্র ৩০ মিনিট বা ১ ঘণ্টাতেই অনেক খানি চার্জ করে ফেলতে পারবেন। আর হাঁ, আরেকটি কথা, আপনার ফোনটি যদি কুইক চার্জিং সমর্থন না করে তবে কুইক চার্জিং পাওয়ার-ব্যাংক কিনে কোন লাভ হবে না। সুতরাং শুধু তখনই কিনুন যখন আপনার ফোনেও এই প্রযুক্তি সমর্থন করার ক্ষমতা আছে। 

টিপস ৭: অতিরিক্ত ইউটিলিটি আছে কিনা প্রয়োজন অনুসারে দেখে নিন 

অনেক পাওয়ার ব্যাঙ্কের সাথে ইন-বিল্ড টর্চ লাইট ফিচার দেখতে পাওয়া যায়। আপনি যদি প্রায়ই বাইরে যেয়ে থাকেন বা কোন কাম্পেইং এ যান তবে ইন-বিল্ড টর্চ লাইট আপনার অনেক সাহায্য করতে পারে। কিছু পাওয়ার ব্যাঙ্কের সাথে আবার ব্লু টুথ স্পীকার ও দেখতে পাওয়া যায় এবং সাথে এফএম রেডিও ও থাকে। তো দেখে নিন এগুলো আপনার প্রয়োজন আছে কিনা। 

টিপস ৮: ভালো কোম্পানির পাওয়ার ব্যাংক কিনুন 

দেখুন যতোদূর আমার অভিজ্ঞতা, সে থেকে বলবো সাওমি কোম্পানির পাওয়ার ব্যাংক অনেক ভালো হয়ে থাকে। তাছাড়া হুয়ায়ের ১৩ হাজার এমএএইচ পাওয়ার ব্যাংক অনেক ভালো হয়। তাছাড়া ওয়ান প্লাস, সনি, স্যামসাং সহ আপনি যেকোনো একটি নামধারি কোম্পানির পাওয়ার-ব্যাংক কিনতে পারেন। এতে কোন সমস্যা হবে না, আশা করা যায়। 

টিপস ৯: ক্যাবল দেখে কিনুন 

কিছু কিছু পাওয়ার ব্যাঙ্কে একদম লাগানো ক্যাবল দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আলাদা ক্যাবল লাগানো থাকে। আপনি যদি একদম সহজ পোর্টাবিলিটি চান বা আপনি যদি আলাদা ক্যাবল বহন করার ঝামেলা না করতে চান তবে ইন-বিল্ড ক্যাবল ওয়ালা পাওয়ার-ব্যাংক কিনতে পারেন।

আপনার একটি কমেন্ট আমাদের পরর্বতী পোস্ট লিখার অনুপ্রেরণা জোগায়। তাই আপনার মুল্যবান কমেন্ট করে পাশেই থাকুন। ধন্যবাদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন